জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য কারো সার্টিফিকেট লাগবে না। কারো জরিপে নয়, সারা বিশ্বই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছে
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে কার্য প্রণালী-বিধির ১৪৭ (১) বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাব (ধারণ) এর উপর আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা।
প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর রাত ৭ টা ১০ মিনিটে আলোচনা শুরু হয়, প্রায় তিন ঘণ্টার এই আলোচনায় ২৯ জন সদস্য অংশ নেন । এতে সরকারি দলের সদস্য, বিরোধী দলের সদস্য এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও অংশ নেন।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিষয়ক মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) প্রকাশিত জরিপে দেখানো হয় যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গত দেড় বছরে সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। জরিপের এই ফলাফলের উপর সাধারণ প্রস্তাবটি আনা হয়।
আলোচনার সূত্রপাত করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। এরপর একে একে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, খাদ্যেমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, খাদ্যপ্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, ড. হাছান মাহমুদ, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনুদ্দিন খান বাদল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী প্রমুখ বক্তৃতায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশে ফিরে শেখ হাসিনা ২১ বছর একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনীদের দোসরদের রাজনৈতিক মোকাবেলা করেছেন। ১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সবকিছু মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশ এখন মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও হত্যাকাণ্ডের ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াতের কোন অবস্থান এখন আর জনগণের মধ্যে নেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন শেখ হাসিনা, এর জন্য বার বার তাকে মৃত্যুর মুখে যেতে হয়েছে। সবদিক থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আইআরআই এর সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশকে চলতে হবে এটা দু:খজনক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কারো সার্টিফিকেট দরকার নাই। শেখ হাসিনার কারণেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। সকল অর্জন হয়েছে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জরিপের রিপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, দেশ যে ভাল চলছে, এটা কারোর সার্টিফিকেটের জন্য বসে থাকতে হয় না। দেশের জনগণের চেহারা দেখলেই বলে দেয়া যায় দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই ভাল আছেন। এত মানুষ পুড়ানোর পরও খালেদা জিয়া যখন পরাজিত ও পরাস্ত হয়ে ঘরে ফেরেন, তখনই স্পষ্ট হয় দেশের জনগণ কার পক্ষে আছেন। মানবিকতার ধার ধারেন না খালেদা জিয়া। উনি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে ছন্নছাড়া করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে ব্যর্থ হয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলেও তাঁর আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার বড় অর্জন হচ্ছে কারোর কাছে মাথা নত করেননি। একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনীদের বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, নারীর ক্ষমতায় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন। খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসা ও মানুষ হত্যার রাজনীতির কারণেই জনগণ শেখ হাসিনার পক্ষে চলে এসেছেন। আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আইআরআই এর জরিপে আমি আশ্চর্য নই, এটা সত্যের স্বীকারোক্তি। শেখ হাসিনার দৃঢ়তার সাথে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছেন বলেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ কেন এই আস্থা? শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ধারণ করেছিলেন বলেই আজ তারা এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৭৫’র পরবর্তী সময়ে এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ দেশের মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। পদ্মা সেতু যাতে না হয় সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস কি না করেছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এদেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।
মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, আমাদের নেত্রী, এমন একজন নেত্রী যার কোন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। আইআরআই এর জরিপের আমাদের মনে হচ্ছে আমরা বিরাট কিছু পেয়ে গেছি। তারা যেখানেই জরিপ করে সেখানেই সংকট ঘণীভূত হয়। তারা তো ইউএসএতে (আমেরিকা) জরিপ করে না, ভারতে জরিপ করে না। বাংলাদেশ ডুবন্ত নৌকা না, বাংলাদেশের নৌকা অশান্ত নয়, বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বার্থেই নির্বাচন করেছে, কিছু লোক তাদের স্বার্থে বাধা দিয়েছে। আগামী ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে। যে দেশের নির্বাচনের সময় বেধে দেওয়া নেই, সেই দেশের নির্বাচন চান। এখানে ২০১৯ এ নির্বাচন হবে। আমি জ্ঞানপাপীদের বলতে চাই ২০১৯ নির্বাচন করলে সঠিক হবে না, আর ২০১৭ সালে নির্বাচন করলে কিভাবে সেটা গণতান্ত্রিক হয়? আমাদের নেত্রী সকলের মণি কোঠায় বসে আছেন, সেই নেত্রীকে স্পর্শ করতে হলে আমাদের ৩০০ জনকে আগে স্পর্শ করতে হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া বিএনপিকে ধংস করেছেন। নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি টিকে থাকতো, বিএনপি উপকৃত হতো, দেশের গণতন্ত্রেরও উপকার হতো।
মো.রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা সরকারের ঘোর বিরোধীরাও স্বীকার করে। এর মূল কারণ প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতা, প্রজ্ঞা মেধা, শ্রম ও সদিচ্ছা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।